ইসলামী ডেস্ক :

কাবাগৃহের নবনির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.)-কে নির্দেশ দেন ‘মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও।’ সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি হজের আজান দেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে : ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে’। (সুরা : হজ, আয়াত : ২৬-২৮)

এই ঘোষণার পর পৃথিবীর পাহাড়গুলো অবনত হয়ে যায় এবং তাঁর আওয়াজ পেৌঁছে যায় পৃথিবীর দিক-দিগনে্ত। ইবরাহিম (আ.)-এর এ আওয়াজ আল্লাহ তাআলা সব মানুষের কানে কানে পেৌঁছে দেন। এমনকি যারা ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আসবে, তাদের কানে পর্যন্ত এ আওয়াজ  পৌঁছে দেওয়া হয়। যাদের ভাগ্যে আল্লাহ তাআলা হজ লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এ আওয়াজের জবাবে ‘আমি হাজির’, ‘আমি হাজির’ বলে হাজির হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইবরাহিম (আ.)-এর ঘোষণার জবাবই হচ্ছে হজে ‘লাব্বাইক’ বলার আসল ভিত্তি। (কুরতুবি, ১২/২৮)

পুরো হজজুড়ে ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতি
পুরো হজজুড়েই আছে। ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতি নিম্নে হজের সঙ্গে জড়িত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিচিহ্ন তুলে ধরা হলো:

কাবাগৃহ : কোরআনে এসেছে, ‘আর যখন ইবরাহিম ও ইসমাইল কাবার ভিত্তি স্থাপন করছিল, তখন বলছিল, হে আমাদের রব! তুমি আমাদের পক্ষ থেকে (এ কাজ) গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৭)

মাকামে ইবরাহিম : যে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে (আ.) কাবা নির্মাণ করেছিলেন তা-ই মাকামে ইবরাহিম। এটি আজও সংরক্ষিত আছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো সে সময়কে, যখন আমি কাবাকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তার স্থান করেছিলাম এবং নির্দেশ দিয়েছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)

সাফা-মারওয়া সাঈ : হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী দেৌড় ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনকাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। যখন তিনি আল্লাহর নির্দেশে তঁার স্ত্রী হাজেরা (আ.) ও শিশু পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে নির্জন মরুভূমিতে রেখে আসেন, তখন পিপাসায় কাতর শিশুর জন্য পানির সন্ধানে হাজেরা (আ.) বারবার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে ছুটে বেড়ান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্তভুক্ত…।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৫৮)

জমজম কূপ : হজের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জমজমের পানি পান করা। ইবরাহিম (আ.)-এর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-এর গোড়ালির আঘাতে জমিন থেকে পবিত্র জমজমের পানি ফোয়ারা বের করেন। মহানবী (সা.) জমজম সম্পর্কে বলেন, ‘জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে, তা পূর্ণ হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৬২)
কোরবারি : হজের অন্যতম আমল হলো মিনায় কোরবানি করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর যখন সে [ইসমাইল (আ.)] তার [ইবরাহিম (আ.)] সাথে চলাফেরা করার বয়সে পেৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বত্স, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ, আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তভূক্ত পাবেন।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০২)

জামারাতে পাথর নিক্ষেপ : ইবরাহিম (আ.) যখন পুত্র কোরবানি করতে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তাঁকে পথভ্রষ্ট করার চষ্টো করে। ইবরাহিম (আ.) তখন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেন। এই ঘটনা স্মরণ করে হজযাত্রীরা মিনার জামারাতে পাথর নিক্ষেপ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর তাআলার জিকির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই জামরায় কংকর নিক্ষেপ এবং সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ করার নিয়ম রাখা হয়েছে।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস : ৯০২)

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version