নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
হেমন্তের পর পরই তিস্তার বুকে জেগে উঠে অসংখ্য বালু চর। আর সেই বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ যেন কৃষকের কাছে সোনার ফলন । চাষতে জানলে বালু চরেও যে সোনা ফলানো যায় তারই প্রমাণ করেছে উত্তরের জেলা নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার তিস্তাপাড়ের কৃষকেরা। চর বালুতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে তাদের মুখে জেনো আহ্লাদের হাসি ফুটেছে।কৃষি নির্ভর এ জেলায় বর্ষাকালে তিস্তা নদীতে খরস্রোত থাকলেও বর্ষায় নদীর দু’কুল উপচিয়ে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। একই সাথে ভাঙনের কবলিত হয় ফসলি জমি বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বর্ষার বিদাযের পরে ধু-ধু বালু চরে পরিণত হয় তিস্তা নদী।বন্যা আর ভাঙনে সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে জেগে উঠা এসব বালু চরেই ফসল বুনেন। ধু ধু বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য। পেটে দু’মুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালু চরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের এসব মানুষ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে শশা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টি কুমড়ার কদর বেশি থাকে। চরাঞ্চলের বালুতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় এই ফসলে বেশি আগ্রহ চাষিদের।চাষিরা জানান, বালু চরে গর্ত করে বালু সরিয়ে নিয়ে গর্তে বাহির থেকে আনা পলি মাটিতে গর্ত পূরণ করে। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে তবে গর্ত প্রতি ৩/৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারা গাছ বড় হলে পানি সেচ আর একটু পরিচর্যা করলে প্রথমে ফুল ও পরে ফল আসতে শুরু করে। বালু চরে গাছ বিচরণ করে তাই খরচ করে মাচাং দিতে হয় না। প্রতিটি গাছে প্রায় ৮/১০ টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটি কুমড়া ৩/৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বর্ষা আসার আগেই মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করেন চাষিরা। প্রতি কুমড়া ক্ষেতেই ৫০/৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়।নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ভাবনচুর গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, তার নিজের কোন জমি নেই। সংসার চালাতে চাষাবাদের বিকল্প নেই। তাই তিস্তা নদীর বুকে জেগে উঠা বালু চরে এক হাজার মিষ্টি কুমড়ার চারা লাগিয়েছেন। তার ক্ষেতে ফল আসতে শুরু করেছে। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচের এ ক্ষেত থেকে নুন্যতম ৪০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।তিস্তা চরাঞ্চলের চাষি জহুরুল হক বলেন, বালুতে গাছের চারাগুলো বিচরণ করে। তাই কোন মাচাং দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভাল হয়। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের বালু জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বিকল্প নেই। সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা প্রণোদনা দেন। কিন্তু চরাঞ্চলের চাষিরা তা পায় না। এ সুযোগ পেলে ব্যাপক হারে চাষাবাদ করা যেত পরিত্যক্ত এসব বালু চরে। যদি আগাম বন্যা না আসে তাহলে এই ফলনে ৪০/৫০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।