ইসলামী ডেস্ক :
এ আয়াত এক ঐশী স্বীকৃতি, যেখানে নববী চরিত্রকে শুধু প্রশংসা নয়, মানবজাতির সর্বোচ্চ নৈতিক শিখর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ছিলেন এমন এক মানুষ, যাঁর জীবনের প্রতিটি ধাপে ছিল মানবিকতার প্রশান্ত সৌরভ, সহনশীলতার প্রশান্ত ছায়া, আর সত্যের অনড় দীপ্তি।
কোরআনের আয়নায় চরিত্রের উপাখ্যান
১. সত্য ও আস্থার প্রতীক : জন্ম থেকে নবুওয়াতের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর মানুষ তাঁকে চিনেছে ‘আল-আমিন’ নামে, যার অর্থ বিশ্বাসযোগ্য, নির্ভরযোগ্য। কোরআনও এই আস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে বলছে, ‘আপনার সহচর কখনো বিভ্রান্ত হননি, পথভ্রষ্টও হননি।’ (সুরা আন-নাজম, আয়াত : ২) তিনি ছিলেন মহান রবের বার্তাবাহক, কিন্তু অনুপম চরিত্র মাধর্যে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মানবিকতার দূত রূপেও।
২. দয়ার প্রতিমূর্তি : কোরআন তঁাকে উপস্থাপন করে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য এক ‘রহমত’ হিসেবে, ‘আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ।’ (সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
৩. ক্ষমাশীলতার অনন্য উদাহরণ : মক্কা বিজয়ের দিনে, প্রতিশোধের সব পথ তাঁর জন্য খোলা ছিল। অথচ তিনি বলেন, ‘আজ তোমাদের প্রতি কোনো গঞ্জনা নেই; তোমরা মুক্ত।’ (ইবনে হিশাম, ২/৪১২)
মানবিকতার সকল লেভেল গুড়িয়ে দিয়ে অবর্ণনীয় যুলুম করা গোষ্ঠীর ওপর বিজয়ী হওয়ার পরও এমন চারিত্রিক পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন শুধু হূদয় দিয়ে অনুভব করা যায়, কলম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।
৪. নম্রতা ও সহানুভূতির ছায়া : তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপতি, বিচারক, শিক্ষক, বন্ধু ও পিতা, কিন্তু অহংকার তাঁর চেহারায় কখনো ঠাঁই পায়নি। আল্লাহ বলেন : ‘মুমিনদের প্রতি তিনি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ও দয়ালু।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১২৮)
তিনি এতোটাই বিনম্র ছিলেন যে গৃহকর্মীর কাজেও হাত লাগাতেন; দরিদ্র-অসহায়দের পাশে দাঁড়াতেন, সবাই মনে করতো তিনি তাদেরই একজন।
তাঁর সারাটা জীবন ছিল কোরআনের জীবনঘনিষ্ঠ অনুবাদ। পবিত্র কোরআনে বারবার তাঁর অনুসরণের কথা বলা হয়েছে, কারণ তিনি কোনো কল্পিত পুরাণ নন। তিনি ছিলেন আমাদের মতো একজন মানুষ, যিনি জীবনযুদ্ধের মাঠে থেকেও থেকেছেন অনন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে আছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)
আজকের আধুনিক সভ্যতায় নৈতিকতা যেখানে ক্ষীণ, সম্পর্কের বন্ধন শিথিল আর মানুষ হারিয়ে ফেলছে মানবিক মূল্যবোধ। সেখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন আমাদের জন্য হয়ে উঠতে পারে এক জীবন্ত দিশারী। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নববী আদর্শে জীবনাচারের তাওফিক দান করুন।