যে আমলগুলো করলে পাওয়া যায় মানসিক শান্তি

তাফসিরবিদদের মতে, জিকির দ্বারা উদ্দেশ্য, নামাজ, নফল ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, তাসবিহ শব্দ উদ্দেশ্য হতে পারে। সবই মুমিনের হূদয়ের খোরাক।

নামাজ : নবীজি (সা.) নামাজে প্রশান্তি লাভ করতেন। তিনি বলেছেন, ‘নামাজে রাখা হয়েছে আমার চক্ষুর শীতলতা।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৪০)

সদকা : সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আর্থিক সমৃদ্ধি আসে। যে দুটি বিষয় একসঙ্গে অর্জন হলে অন্তর প্রাচুর্যময় হওয়া স্বাভাবিক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬১)

আল্লাহর ওপর ভরসা : আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপন করলে হতাশারা কাবু করতে পারে না, মানসিক শান্তি ছিনিয়ে নিতে পারে না। মানুষ বেশির ভাগ সময় অশান্তি ও হতাশায় ভোগে অদৃশ্য ভয় থেকে, কিছু অভাবের ভয়, হারানোর ভয়, বেদনার ভয়, বিপদের ভয়—যার সবগুলোই আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। যারা আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও ভরসা স্থাপন করতে পারে, তাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট হয়ে যান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা যদি প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের ঞয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)

মানুষের সঙ্গে সদাচরণ হাস্যোজ্জল থাকা : সদা হাস্যোজ্জল থাকা ও মানুষের সঙ্গে সদাচরণ থাকাও মনকে প্রশান্ত রাখতে সাহায্য করে। এতে সমাজে যেমন মানুষের ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়, তেমনি মন ও মস্তিষ্কেও এর উপকারী প্রভাব পড়তে থাকে। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া সদকাস্বরূপ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

শোকর আদায় করা : অনেক সময় বান্দার নাশোকরিমূলক আচরণে কারণে তাদের ওপর বহু বিপদ আপদ নেমে আসে। সব পেয়েও শূণ্যতায় ভোগে। তাই প্রকৃত শান্তি পেতে সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর আদায় করার বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দিব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে আমার আজাব বড় কঠিন। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

আখিরাতকে প্রাধান্য দেওয়া : মহান আল্লাহ মূলত আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাঁর ইবাদতের জন্য। আমাদের উচিত, আমাদের মূল কাজকে সবকিছুর ওপর গুরুত্ব দেওয়া। এর ব্যতিক্রম করলে অশান্তি আসা স্বাভাবিক। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহাপবিত্র আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করব। তুমি যদি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর হতাশা দিয়ে পূর্ণ করব এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করব না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবার অন্তরকে প্রশান্তি দান করুন। জীবনের মূল্যবান সময়গুলোকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যয় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।