যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন লাখো মানুষ। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যজুড়ে অনুষ্ঠিত এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিক্ষোভকারীরা একক বার্তায় মুখর হন— আমেরিকায় কোনো রাজা চলবে না, দেশকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে যেতে দেওয়া হবে না।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ‘নো কিংস’ নামে এই আন্দোলনটি এখন যুক্তরাষ্ট্রে গণজাগরণের রূপ নিয়েছে। বড় শহর থেকে শুরু করে ছোট ছোট কমিউনিটিতেও মানুষ পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগানে অংশ নিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরোধিতায়।

গার্ডিয়ান বলছে, এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মাত্র ছয় মাস আগেও ডেমোক্র্যাট দল হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের দুই কক্ষে রিপাবলিকানদের শক্ত অবস্থান মোকাবিলায় দিশেহারা ছিল। এখন তারা সংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী।

ইনডিভিজিবল সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন এপি-কে বলেন, ডেমোক্র্যাটরা এখন সাহস দেখাচ্ছে। জনগণ রাজনীতির মাঠে ফিরে এসেছে।

শিকাগোর গ্রান্ট পার্কের বাটলার ফিল্ডে অন্তত ১০ হাজার মানুষ জড়ো হন, যেখানে ফেডারেল অভিবাসন সংস্থা (আইসিই)-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন। পরে শিকাগো ট্রিবিউন জানায়, সেখানে উপস্থিত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে।

শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মনে হয় গৃহযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি চায়। কিন্তু আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— আমরা মাথা নত করব না, ভয় পাব না, আত্মসমর্পণ করব না। আমাদের শহরে সেনা চাই না।

ক্যালিফোর্নিয়ার থাউজ্যান্ড ওকস শহর থেকে আসা অংশগ্রহণকারী এসচবাখ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দমননীতি ও বক্তব্যই আমাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করেছে।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতেও বিপুল জনসমাগম হয়। মার্কিন ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড়ো হন দুই লাখের বেশি মানুষ। পোর্টল্যান্ডে মূল বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ; স্থানীয় পুলিশ সড়ক ও সেতু বন্ধ করে অংশগ্রহণকারীদের সহযোগিতা করে।

তবে শহরের দক্ষিণাংশে আইসিই ভবনের সামনে সংঘটিত আরেকটি বিক্ষোভে উত্তেজনা দেখা দেয়। সেখানে ফেডারেল কর্মকর্তারা গ্যাস ক্যানিস্টার নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। পোর্টল্যান্ড মারকিউরি পত্রিকার প্রতিবেদক সুজেট স্মিথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্লুস্কাই-এ লেখেন, বিকেল ৫টার আগেই ফেডারেল এজেন্টরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গ্যাস ছোড়ে।

অন্যদিকে নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে শহরে বিক্ষোভটি রঙিন উৎসবের রূপ নেয়। ইউনিকর্ন, মুরগি ও ব্যাঙের পোশাকে অনেকে অংশ নেন এই ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে। স্থানীয় বাসিন্দা এমি অ্যাডলার বলেন, সবকিছুই এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে। আমরা এই অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করছি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version