এনবিআর ডেস্ক :

মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, তিনি নিজেও বহু দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছেন। কেউ ভ্যাটের রিসিট দেন না। তারা ইলেক্ট্রনিক্স ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার করেন না। ভবিষ্যতে মিষ্টির দামের সাথেই ভ্যাট যুক্ত করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব বোর্ড ভবনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

বর্তমানে মিষ্টির ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। গত বছর এই ভ্যাট ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এই ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ সুইটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শ্রী ননী গোপাল ঘোষ। তিনি বলেন, মিষ্টির ওপর যখন সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট ছিল তখন অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ভ্যাট বাড়ার কারণে বিক্রি কমছে, রাজস্বও কমছে। তাই ভ্যাট ১০ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক।

এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট ফ্রি করে দিলে রাজস্ব বাড়বে- এটা একটা আজগুবি কথা। মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের ওপর অঙ্ক করে দেখলেন রাজস্ব আদায় কম, সাড়ে ৭ শতাংশ হলে বেশি হয়- এ রকম জাদুকরি দেশে বাস করলে তো হবে না।

নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আব্দুর রহমান খান জানান, তিনি বহু মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনেছেন। কোনো দোকানদারই তাঁকে ভ্যাটের রিসিট দেননি। তারা ইএফডি মেশিনও ব্যবহার করেন না। ভ্যাট দেন জনগণ। তিনি নিজেও যতবার মিষ্টি কিনেছেন সব জায়গায় ভ্যাট দিয়েছেন। কিন্তু সেই ভ্যাট সরকারের কোষাগারে যায়নি।

ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে মিষ্টিতে সুপারশপের মতো ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মিষ্টির দামের সঙ্গে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভ্যাট আলাদা করে ধরা হবে না। ক্রেতা ভ্যাট দেখে চমকে উঠবে না। এমন একটা আদেশ প্রস্তুত করা হয়েছে। মোট মূল্যের ওপর ভ্যাট ধরা হবে। ক্রেতার জানার দরকার নেই যে তিনি কত টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এই একই পদ্ধতি এখন সুপারশপে রয়েছে। 

সভায় স্থানীয় সোলার প্যানেল উৎপাদকদের ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সোলার মডিউল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। যাত্রীবাহী নৌযানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ওপর মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে অ্যাসোসিয়েশন।  এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি) জেট ফুয়েলের ওপর আমদানি শুল্ক ও মূসক অব্যাহতি, উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর কর হ্রাসের প্রস্তাব করেছে। এছাড়া ৬৫ শতাংশ কাঁচামালের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রান্সফরমার অ্যান্ড সুইচগিয়ার।

যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্সের ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো তাদের টিকিটের দামের সঙ্গে যোগ করে নিয়ে নেয়। এই ট্রাভেল ট্যাক্সের টাকা সরকারের টাকা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই টাকা সরকার পায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো সরকারি কোষাগারে এটা জমা দেয় না বা কখনও কখনও কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা ব্যবসা বন্ধ করে চলে যায়। সরকারের কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকলে সেটা দেয় না। এসব কারণে এনবিআরের পরিকল্পনা হচ্ছে- যাত্রীদের ট্রাভেল ট্যাক্স যাত্রী নিজে দেবে। তারা টাকা জমা দিয়ে চালান নেবে এবং সেটা দেখিয়ে বিমানে উঠবে। 

তিনি বলেন, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ট্রেন্ড ফ্যাসিলিটেড করা হবে। লুফ হোলগুলো বন্ধ করা হবে। যতটা সম্ভভ বৈষম্য কমানো হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version