বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তবু যেন একেবারে অন্য এক জগৎ—মালদ্বীপ। নীল সমুদ্র, সাদা বালির সৈকত আর নিরিবিলি দ্বীপের রাজ্য। পরিবার নিয়ে ভ্রমণের আনন্দ সব সময়ই আলাদা। পরিবার নিয়ে এখানে ভ্রমণ মানে শুধু ছুটি কাটানো নয়, বরং স্মৃতির ভাণ্ডার ভরে নেওয়া।

প্রথমেই ফ্লাইট বুকিং, পাসপোর্ট, ভিসা (মালদ্বীপে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়) এবং প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিলাম। জানালার বাইরে যত দূরে চোখ যায়, ততই দেখা যায় নীল রঙের অসংখ্য দ্বীপ ছড়িয়ে আছে ভারত মহাসাগরের বুকে। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে প্রথমেই চোখে পড়ে ছোট অথচ ব্যস্ত এই শহরের পরিচ্ছন্নতা এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ।

মালে বড় শহর নয়, তবে প্রাণবন্ত। রাস্তায় গাড়ি, মোটরবাইক, ছোট বড় অনেক রকম দোকান, আর হাসিখুশি মানুষের ভিড়—সব মিলিয়ে এক অনন্য আবহ। প্রথম রাত কাটে আমাদের মালে শহরের এক হোটেলে ।

মালে শহর ভ্রমণের পাশাপাশি মূল আকর্ষণ হলো আশেপাশের দ্বীপগুলো। পরিবার নিয়ে স্পিডবোটে বা সি-প্লেনে করে রিসোর্টে যাওয়া এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। পথে পথে দেখা যায় সমুদ্রের ভেতরে রঙিন প্রবাল, মাছ, আর দূরে ভাসমান কাঠের কটেজ।

তাই পরের দিন আর দেরি না করে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবকিছু গুছিয়ে মালে থেকে একটি লাক্সারিয়াস গাল্ফ ক্র্যাফট ট্যুর ৪৮ স্পিডবোট করে পৌঁছালাম আমাদের স্বপ্নের এবং পছন্দের শেরাটন আইল্যান্ড এন্ড রিসোর্ট দ্বীপে। এখানেই ছিল মূল আনন্দের কেন্দ্র। সাদা বালির সৈকত, স্বচ্ছ নীল জল আর রঙিন মাছের খেলা।

সকালে সূর্যোদয় দেখতে সৈকতে হাঁটা দুপুরে পরিবার নিয়ে স্নরকেলিং, প্যারাসেলিং ও স্কুবা ডাইভিং বিকেলে নারকেলের পানি হাতে সমুদ্রতীরে বসে গল্প, রাতে খোলা আকাশের নিচে বারবিকিউ ডিনার আরো অনেক কিছু।

মালদ্বীপে স্থানীয় খাবারের মধ্যে মাস হুনি (টুনা ফিস, নারকেল ও পেঁয়াজের মিশ্রণ) সকালের নাশতায় দারুণ। তাজা সামুদ্রিক মাছের গ্রিল, নারকেলের দুধে রান্না করা তরকারি, আর ট্রপিক্যাল ফল—সব মিলিয়ে স্বাদে ভরপুর অভিজ্ঞতা।

শেরাটন আইল্যান্ডে তিনদিন থাকার পর আমাদের পরের গন্তব্য হয় ফান আইল্যান্ড এন্ড রিসোর্টে এখানেও টানা তিন দিন আমরা শেরাটন আইল্যান্ড এন্ড রিসোর্ট এর মত অনেক একটিভিটিজ এর ভিতরে ছিলাম ।

শেষ দিনে সূর্যাস্তের সময় আমি কান্তি (স্ত্রী) আর মনন (ছেলে) সৈকতে বসে ছিলাম। আকাশের কমলা-গোলাপি রঙ, সমুদ্রের ঢেউয়ের মৃদু শব্দ আর ঠান্ডা বাতাস—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, সময় যেন থেমে গেছে। মালদ্বীপ শুধু একটি ভ্রমণ নয়, বরং পরিবারের সঙ্গে কাটানো এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি হয়ে রইল। সৈকতে সময় কাটানো, নরম বালিতে হাঁটা, শিশুদের জন্য বালুর দুর্গ বানানো, আর ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে সূর্যাস্ত দেখা।

মালদ্বীপে পরিবারের সঙ্গে কয়েকটি দিন কাটানো মানে বাস্তবের বাইরে এক স্বপ্নের দ্বীপে থাকা। এখানে প্রতিটি ভোর শুরু হয় সমুদ্রের হাওয়া আর ঢেউয়ের শব্দে, আর প্রতিটি সন্ধ্যা রঙিন আকাশের নিচে মিলিয়ে যায়। একবার এলে মন চায় বারবার ফিরে আসতে।

তারেক রাসেল জ্যোতি
ভ্রমণকারী

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version