ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ পদত্যাগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান আজকে তার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

এর আগে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

এরপর থেকেই বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাসুদ। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে দেখা করতে যান ওবায়েদ উল্লাহ মাসুদ। গভর্নর ভবনের প্রবেশ গেটের ওয়েটিং রুমে স্বাক্ষাতের আশায় দীর্ঘ সময় বসেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারও সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলেনি। পরে হতাশ মন নিয়ে চুপচাপ ফিরে যেতে হয় তাকে। সেসময় জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, এক ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

ব্যাংক হিসাব তলব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বচ্ছতার স্বার্থে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের হিসাব তলব করা হচ্ছে। এটি ধাপে ধাপে সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আমি এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখি।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বিগত সরকারের সময়ে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সময় তাকে স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইসলামী ব্যাংকসহ এখন পর্যন্ত ১৪টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সম্প্রতি ব্যাংকটিতে নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জোবায়দুর রহমানকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে চেয়ারম্যান করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই গত ১১ জুলাই ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যানের সমর্থক হিসেবে পরিচিত কিছু শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারী প্রধান কার্যালয়ের সামনে জোবায়দুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

এ পরিস্থিতিতে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের ব্যাংক হিসাব তলবকে কেন্দ্র করে ব্যাংক মহলে আলোচনার ঝড় ওঠেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যে চিঠি পাঠিয়েছে, সেখানে মাসুদের পাশাপাশি তার স্ত্রী মারজিনা বেগম ওরফে মুনমুন মাসুদ, দুই ছেলে জুন্নুন সাফওয়ান ও জুনায়েন জুলকার নায়েন তিয়ান এবং মেয়ে তাসমিয়া তারান্নুম নাওমির হিসাবও চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, লকার সার্ভিস, স্টুডেন্ট ফাইল, ক্রেডিট কার্ড, প্রিপেইড বা গিফট কার্ডের তথ্য জমা দিতে হবে। এ ছাড়া, তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো হিসাব চালু থাকলে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা বা তদূর্ধ্ব অঙ্কের লেনদেনের সব তথ্য বিএফআইইউতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আগে পরিচালিত হলেও বর্তমানে বন্ধ থাকা হিসাবগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছে।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং তার আগে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সোনালী ব্যাংক থেকে অবসরের পর দীর্ঘ বিরতি শেষে তিনি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে তার অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি শুরু থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েন। এ নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে বলেও ব্যাংকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে একটি পক্ষ বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপকে বাঁচাতে কাজ করছে। তাদের সমর্থন দিচ্ছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version