সময় সমাচার ডেস্ক :

ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থীদের পক্ষে আদালতের রায় ঘোষণার পর এবার খুলনায়ও বিএনপির পক্ষ থেকে মেয়র পদ ফিরে পাওয়ার আশাবাদী হয়ে উঠেছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকরা। তারা আশা করছেন, খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নজরুল ইসলাম মঞ্জু আদালতের রায়ে মেয়র হিসেবে পুনর্বহাল হতে পারেন।

আদালতের আদেশ: একতরফা রায়ের সম্ভাবনা
২০১৮ সালের ১৫ মে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে খুলনার যুগ্ম-জেলা জজ ১ম আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়।

বিভিন্ন সময়ে আদালতের সমন প্রেরণ সত্ত্বেও তারা কেউ হাজির হননি। অবশেষে গত ৮ এপ্রিল আদালত একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিবাদীদের বিরুদ্ধে বিকল্প পদ্ধতিতে সমন জারি করেন। আগামী ২৪ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে জবাব প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত দিনে তারা হাজির না হলে মামলার রায় একতরফাভাবে ঘোষণা করা হবে। 

এদিকে, বিবাদীদের মধ্যে তালুকদার আব্দুল খালেকের আদালতে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন মঞ্জুর সমর্থকরা। ফলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে একতরফা রায়ের সম্ভাবনাই বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জনগণের প্রত্যাশা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন
এ প্রসঙ্গে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঞ্জুর সমর্থনে পোস্ট দিচ্ছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের রায়ের পর খুলনাবাসীরও ন্যায়বিচার পাওয়ার পালা এসেছে।

মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ও ঢাকার মামলায় আদালত ধানের শীষের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করায় খুলনাতেও আমরা আশাবাদী। আমাদের কাছে রয়েছে ভোট ডাকাতির অসংখ্য প্রমাণ, ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি। আশা করি এবারও আদালত সঠিক রায় দেবেন।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু: এক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক
খুলনায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে প্রায় পাঁচ দশক ধরে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৭৯ সালে ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করে একে একে মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৯ সালে খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয় এবং তিনি ছিলেন দীর্ঘ সময় কারাবন্দি। দলের দুঃসময়ে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখা মঞ্জু এখনও খুলনা বিএনপির সবচেয়ে বর্ষীয়ান এবং জনবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত।

ন্যায়বিচারের আশাবাদ
মঞ্জুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোল্লা গোলাম মওলা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিচার বিভাগ ছিল তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সেই আমলে ন্যায়বিচার পাওয়া অসম্ভব ছিল। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আমরা ইতোমধ্যে দুটি রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছি। সেই ধারাবাহিকতায় আমরাও আশাবাদী যে, খুলনায় আমাদের ক্লায়েন্ট মঞ্জু ন্যায্য বিচার পাবেন।’

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের পদচ্যুত করে। এরপর থেকেই একের পর এক মামলার রায় পুরনো অন্যায়ের প্রতিকার হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রামের শাহাদাত হোসেন ও ঢাকার ইশরাক হোসেনকে আদালত মেয়র হিসেবে ঘোষণা করার পর এবার নজর সবার খুলনার দিকে। আগামী ২৪ এপ্রিল আদালতের রায় কী হয়, তার ওপর নির্ভর করছে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর রাজনৈতিক ভাগ্য এবং খুলনার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চিত্র।

নগরবাসী এখন মুখিয়ে আছে এই রায় শোনার জন্য—একজন ত্যাগী, জনবান্ধব এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক নজরুল ইসলাম মঞ্জু কি ফিরে পাবেন তার প্রাপ্য মেয়র পদ?

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version