নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন তার আসন্ন আত্মজীবনী থেকে প্রকাশিত বইয়ের একটি অংশে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে গাঁজা সেবনের এক মুহূর্ত তার মনে ২০১২ সালের সেই বিভীষিকাময় স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনে, যখন তিনি তালেবানের গুলিতে আহত হয়েছিলেন।

দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এই অংশে মালালা লিখেছেন, কীভাবে এক রাতে তার বন্ধুর সঙ্গে আড্ডার সময় ধীরে ধীরে তার দমিত মানসিক আঘাত তার সামনে চলে আসে।

মালালা জানান, সে সময় তিনি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলেন না।

এক বন্ধু তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ‘দ্য শ্যাক’ নামের এক জায়গায় বিশ্রাম নিতে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে গাঁজা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল। মালালা জীবনে প্রথমবার বং থেকে টান দেন, আর তার পরই তিনি তীব্র বিভ্রান্তি ও অচেতনতার অনুভূতি পেতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিজেকে শরীরের ভেতর বন্দি মনে করতে থাকেন।

এরপরই তিনি ২০১২ সালের সেই ভয়াল দিনের স্মৃতিতে ফিরে যান; যখন মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলার কারণে তালেবান বন্দুকধারী তার মাথায় গুলি চালিয়েছিল।

স্মৃতিকথায় তিনি লেখেন, ‘আমি যেন আমার শরীরের ভেতর আটকে গিয়েছিলাম,’ এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ার মুহূর্ত থেকে কোমায় থাকার অভিজ্ঞতাগুলো ভয়ঙ্কর স্পষ্টতায় মনে ফিরে আসে। তিনি মনে করেন, কীভাবে তিনি ডরমেটরির মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছিলেন, আর তার বন্ধু আনিশা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন—কিন্তু তার চোখের সামনে কেবল রক্ত, গুলির শব্দ আর বিশৃঙ্খলার দৃশ্য ঘুরপাক খাচ্ছিল।

এই ঘটনার মাধ্যমে মালালা উপলব্ধি করেন যে, তিনি এতদিন যেসব স্মৃতি ভুলে গেছেন ভেবেছিলেন, সেগুলো আসলে অবচেতনে লুকিয়ে ছিল।

তিনি লেখেন, ‘মানুষ আমাকে সবসময় জিজ্ঞাসা করত, আমি গুলির ঘটনাটা কতটা মনে রেখেছি। আমি বলতাম আমার মস্তিষ্ক সেগুলো মুছে দিয়েছে—কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম, তা সত্য নয়।’

এই অংশে মালালার মানসিক আঘাত, তার দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা ও সহিংসতার পরবর্তী মানসিক ক্ষতগুলোর এক নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে। তার নতুন স্মৃতিকথায় তিনি শারীরিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার পথযাত্রা ও প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রবেশের অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। বইটি এ বছর শেষে প্রকাশিত হবে।

সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version