বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি হেলাল হাফিজের ৭৮তম জন্মদিন আজ (৭ অক্টোবর)। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার ছিলেন স্কুলশিক্ষক এবং মা কোকিলা বেগম গৃহিণী।

ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে লেখালেখির সূচনা হলেও হেলাল হাফিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয় স্বাধীনতার এক যুগ পরে, ১৯৮৬ সালে। পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলা এই গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন কবিতার অন্যতম শক্তিশালী কণ্ঠ। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’, আর ২০১৯ সালে প্রকাশ পায় তৃতীয় গ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।

তার রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার পঙক্তি—
“এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় / এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”—
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় স্বাধীনতা সংগ্রামে এক অনন্য প্রেরণার উৎসে পরিণত হয়।

হেলাল হাফিজের উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে রয়েছে দুঃসময়ে আমার যৌবন, অস্ত্র সমর্পণ, বেদনা বোনের মতো, ইচ্ছে ছিল, নিখুঁত স্ট্রাটেজি, দুঃখের আরেক নাম, অশ্লীল সভ্যতা, প্রত্যাবর্তন, ফেরিওয়ালা, একটি পতাকা পেলে, অমীমাংসিত প্রভৃতি।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন যশোহর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার, এবং নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।

দীর্ঘদিন গ্লুকোমায় ভুগে ২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন হেলাল হাফিজ। শাহবাগের একটি হোস্টেলে বসবাসরত কবিকে বাথরুমে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাংলা কবিতায় প্রতিবাদ, প্রেম ও স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে চিরঅমর হয়ে আছেন কবি হেলাল হাফিজ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version