আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) শুভ মহালয়া। এই দিন থেকেই সূচনা হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার। ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে চলছে চণ্ডীপাঠ, তর্পণ এবং দেবী দুর্গার বন্দনা। শরতের শুভ্র প্রভাতে চণ্ডীপাঠের ধ্বনিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।

পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনেই দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। চণ্ডীপাঠে বর্ণিত হয়েছে দেবীর সৃষ্টি, অসুর বধ ও শুভ শক্তির জয়গান। তাই মহালয়া শুধু পূজার সূচনা নয়, এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্যমণ্ডিত একটি দিন। এদিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজা এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

এই দিনটি পূর্বপুরুষদের স্মরণ ও শ্রদ্ধারও বিশেষ দিন। ভোরে ভক্তরা জলাধারে দাঁড়িয়ে তর্পণ করেন, পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায়। এরপর শুরু হয় মহালয়ার বিশেষ পূজা ও দেবীর চক্ষুদান। বিশ্বাস করা হয়, মহালয়ার দিনেই দেবী দুর্গা তার মর্ত্যে আগমনের বার্তা দেন।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মন্দিরে ভোর থেকেই ভক্তদের ভিড় জমে। ঢাক-উলুধ্বনি আর চণ্ডীপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে মন্দিরে আসেন দেবীকে আহ্বান জানাতে। ভক্তদের ভাষায়, মায়ের আগমনের আনন্দে তাদের হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রত্যাশা— এবারের পূজা হোক নির্বিঘ্ন, শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময়।

ধর্মীয় শাস্ত্রমতে, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন ঘটছে গজে বা হাতিতে। এটি শান্তি, শস্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে দেবীর গমন নির্ধারিত হয়েছে দোলায় বা পালকিতে, যা শাস্ত্রে রোগ-শোক ও অশান্তির প্রতীক হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। তবুও ভক্তদের বিশ্বাস— দেবী আসবেন অশুভ শক্তি দমন করে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা ঘটাতে।

বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মহালয়া। তাই এই দিনে ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয় দুর্গাপূজার শেষ প্রস্তুতি। প্রতিমায় চলছে চক্ষুদান, সাজসজ্জা আর রঙ-তুলির শেষ ছোঁয়া। সব মিলিয়ে মহালয়া ঘিরে ভক্তদের মনে বইছে দেবী আগমনের আনন্দধারা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version