অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণসহ চার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর আওতাধীন সব অফিসে।

রোববার (২৫ মে) সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর এনবিআর প্রধান কার্যালয়ে নিচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতির কর্মসূচি পালন করছেন।

তবে কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবার আওতামুক্ত রয়েছে। কর্মবিরতি পালন শেষে আজ বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা না পাওয়ায় গতকাল পূর্বঘোষিত কলম বিরতি কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

নতুন ঘোষণা না এলে ২৬ মে (সোমবার) থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে বলে জানা গেছে।

গতকাল এনবিআরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় বিপুল সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বলা হয়, সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিতি রয়েছে। এ বিষয়টি আমাদের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

গত ২২ মে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও সব অংশীজনের মতামত নিয়ে টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

ওই দিন রাতে পরামর্শক কমিটিসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে জারি করা অধাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।

তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিকে সাধুবাদ জানালেও চার দাবি আদায়ে অটল অবস্থানে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। ২২ মে রাতের পাল্টা সংবাদ বিবৃতিতে ওই দাবির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর ঐক্য পরিষদে একাধিক কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রেস রিলিজের প্রতি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ দেখেছে। আমরা আমাদের দাবিতে অটল রয়েছি। এখনও অধ্যাদেশ বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি, এনবিআরকে বিলুপ্ত করা নয় বরং সংস্কারের মাধ্যমে একে একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রাজস্ব এজেন্সি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি, কিংবা এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করার বিষয়ে ঘোষণা আসেনি। আমরা আমাদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে যথেষ্ট সময় দিয়ে তীব্র করতে বাধ্য হয়েছি, হঠাৎ করে নয়। কর্মসূচির মাঝে মাঝে আমরা বিরতিও দিয়েছি, দেশ ও মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে। সরকার শুরু থেকেই যদি আমাদের যৌক্তিক দাগিুগুলোর বিষয়ে আজকের মতো ভাববার সদিচ্ছা প্রদর্শন শুরু করতো তবে এই সমস্যা অনেক আগেই সুরাহা হয়ে যেতো বলে মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের চারটি যৌক্তিক দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস আমরা শিগগিরই পাবো। দাবি পূরণের আগ পর্যন্ত আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চলবে।

গত ১৩ মে আগারগাঁও এনবিআরের সামনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুসারে ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও ১৯ মে কলম বিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। আলোচনার আশ্বাসে ২০ মে আন্দোলন স্থগিত রেখে ২১ মে থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version