ক্রীড়া ডেস্ক :
ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জেতালেন স্টেফান টেইলার। যদিও তার চোখেমুখে রাজ্যের বিস্ময়। যে সমীকরণ তিনি জানতেন, সেটা সত্যি ছিল না। ১১ ওভারে ম্যাচ জিতলেও বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে টপকে জায়গা করে নেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ– সেটা সত্যি।
কিন্তু সেখানেও ছিল বেশ জটিলতা। কেমন জটিলতা? সেটার উত্তর খুঁজে নেয়া যাক আইসিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।
থাইল্যান্ড নারী দলের ইনিংস শেষের পর আইসিসি ওয়েবসাইট থেকে জানানো হয়, ১৬৭ রানের টার্গেট ১০ দশমিক ১ ওভারে স্পর্শ করলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে বিশ্বকাপে। তবে সেটা ১১ ওভারেও নেয়া সম্ভব। সেজন্য শুরুতে ১৬৬ রান করতে হতো তাদের। এরপর ছক্কা হাঁকিয়ে ১৭২ রান করতে পারলে ১১ ওভারে ম্যাচ জিতেও বাংলাদেশকে ছাপিয়ে তারা যাবে বিশ্বকাপে।
ম্যাচের গল্পে যাওয়ার আগে কৃতিত্ব দিতেই হয় থাইল্যান্ডের ব্যাটার নাত্তাখাম চাংথামেকে। তার এক ফিফটিতে ভর করে উইন্ডিজ নারীদের বিপক্ষে থাইল্যান্ডের স্কোর হয়েছিল ১৬৬। থাইল্যান্ডের ইনিংস অবশ্য শেষ হতে পারতো আরও অনেক আগেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের নারীদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে একসময় ৮৫ রানেই ৭ উইকেট হারায় থাইল্যান্ড। চারে নামা চাংথাম একাই ছিলেন প্রাচীর হয়ে। খেলেছেন ৬৬ রানের ইনিংস।
ম্যাচের শেষদিকে থাই নারীদের আর কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে না পারলেও বলের পর বল খেলে গিয়েছেন, আর সেটাই বাংলাদেশের স্বপ্নটা উজ্জ্বল করেছে বিশ্বকাপের দৌড়ে।
১০.১ বলের লক্ষ্যটা নিয়ে শুরু থেকে আগ্রাসী ভূমিকায় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ক্যারিবিয়ান ওপেনার হেইলি ম্যাথিউস আর কিয়ানা জোসেফ ছিলেন দুর্দান্ত আগ্রাসী। ১২ বলে ২৬ করে কিয়ানা থামলেও অধিনায়ক হেইলি ছুটছিলেন দুর্বার গতিতে। বাংলাদেশের স্বপ্নটা প্রতি মূহুর্তেই ক্ষয়ে আসছিল।
দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল থাইল্যান্ডের মেয়েদের একের পর এক মিস ফিল্ডিং। তারপরেও বাংলাদেশের আশার পালে বাতাস দিয়ে ৭ম ওভারের শেষ বলে আউট হন হেইলি ম্যাথিউস। থামে তার ২৮ বলে ৭০ রানের ঝোড়ো ইনিংস।
ম্যাচটা তখন সমীকরণ, বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। থাইল্যান্ড যেন বিক্রিয়ার সেই প্রভাবকের মতোই। যাদের বিদায় আগেই নিশ্চিত, কিন্তু পুরো আসরকে প্রভাবিত করছে নীল জার্সিধারীরা।
হেইলি ম্যাথিউসের পর ক্যারিবিয়ানদের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনে নামা শ্যানেল হেনরি। ১৭ বলে ৪৮ রান করেছেন। উইন্ডিজ নারীদের চার-ছয়ের কাছে তখন বাংলাদেশের দর্শকরা অসহায়। প্রতিটা ডট বল যেন টাইগ্রেসদের জন্য আশীর্বাদ। এরই মধ্যে ৯ রান করে রান আউট হন শেমেইন ক্যাম্পবেল।
নির্ধারিত ১০.১ ওভারে উইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ১৫৭। তখন পর্যন্ত টিকে ছিল ১৭২ রান এবং ১১ ওভারের সমীকরণ। পরের বলেই বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন শ্যানেল হেনরি। আলিয়াহ অ্যালেইনে প্রথম বলে চার মেরে জমিয়ে দেন সমীকরণ। ১০.৪ ওভারে সিঙ্গেলস নিলে স্ট্রাইকে আসেন স্টেফেন টেইলর। উইন্ডিজের রান তখন ছিল ১৬২।
এই সময় ১০.৫ ওভারের বলে ১ চারে ১৬৬ এবং ১ ছক্কায় ১৭২ রানই নিতে পারতো তাদের বিশ্বকাপে। কিন্তু স্টেফান টেইলর সম্ভবত ভুল বুঝেছিলেন। আর সেটাই আশীর্বাদ হয়ে যায় বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য। ১০.৫ ওভারে স্টিফেন টেইলরের হাঁকানো বল সরাসরি মিড অফের ওপর দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারি লাইনের ওপারে।
উল্লেখ্য, ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করলেও বিশ্বকাপটা উইন্ডিজ নারীরা মিস করে যায় ০.০১ রানরেটের জন্য। বাংলাদেশের নেট রান রেট +০.৬৩৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছে +০.৬২৬ পর্যন্ত। আর সেই ১ বলের সমীকরণ মিলিয়ে বাংলাদেশের ঠাঁই হলো নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে।