প্রচলিত জীবনধারার বাইরের মানুষদের চুল জোর করে কেটে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের আচরণ ‘সম্পূর্ণ অমানবিক, বেআইনি এবং সংবিধান ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’।
বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে একজন পথচারীর চুল ও চুলের জট জোরপূর্বক কেটে দিচ্ছে। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
“বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ প্রতিটি নাগরিককে আইনের আশ্রয়ে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার দিয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩২ জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে এবং অনুচ্ছেদ ৩৫ কারও প্রতি নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ নিষিদ্ধ করেছে।”
আসক বলছে, “প্রকাশ্যে জোর করে চুল কেটে দেওয়া কেবল ভুক্তভোগীর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন নয়, বরং তার মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। এ ধরনের ঘটনা সমাজে ভীতি, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “আসক দৃঢ়ভাবে মনে করে, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। তাই দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে যে ভবিষ্যতে আর কোনো নাগরিক এমন অবমাননা ও বেআইনি আচরণের শিকার না হন।”
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত জীবনধারার বাইরের মানুষজনদের এমন ‘জোরপূর্বক’ চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে, তা আবার ফলাও করে প্রচারও করা হচ্ছে ফেইসবুক-ইউটিউবে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, কেউ চাইলেই কাউকে ধরে জোর করে চুল-দাড়ি কেটে দিতে পারেন কি না; কিংবা ‘ভিউ বাণিজ্যের’ চেষ্টায় আবার সেসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করাটাও কতটা আইনসিদ্ধ?
আইনজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই কারো চুল-দাড়ি কেটে দেওয়াটা ‘ফৌজদারি অপরাধ’। সে ব্যক্তি যেই হোক, এভাবে কারও ব্যক্তি বিশ্বাসের ওপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার ‘কারো নেই’।