সম্পাদকীয় কলাম
গত কয়েক মাস ধরে গাজা উপত্যকা ভয়াবহ সহিংসতার সাক্ষী হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র আক্রমণের পর ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান চালাতে শুরু করে, যা ক্রমেই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। এ সংঘাতের প্রধান ভুক্তভোগী হলো গাজার নিরপরাধ সাধারণ মানুষ।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) হামাসের অবকাঠামো ধ্বংসের নামে গাজা শহরে ব্যাপক বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান চালাচ্ছে। আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, স্কুল এবং শরণার্থী শিবির পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সামগ্রীর মারাত্মক সংকট চলছে। অনেক জায়গায় অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই। আহতদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন।
ইসরায়েল দাবি করছে, হামাস বেসামরিক অবকাঠামোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার মাত্রা ও মানবিক আইনের লঙ্ঘন নিয়ে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও উঠেছে।
এদিকে গাজার মানবিক সংকট দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে ও দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ ইসরায়েলের “আত্মরক্ষার অধিকার”কে সমর্থন করলেও, অনেকে আবার ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে “অতিরিক্ত এবং অমানবিক” বলে আখ্যা দিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত দাবি করেছে।
এই সংঘাত ইতোমধ্যে পশ্চিম তীর ও লেবানন সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে। হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে, যা একটি বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করছে।
মিশর, কাতার ও জাতিসংঘ শান্তি আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক জটিলতা সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে গাজার নিরপরাধ মানুষরা, যারা বছরের পর বছর যুদ্ধের ছায়ায় বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।