গত ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে কারাবন্দীরা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেকে ফিরে আসলেও এখন পর্যন্ত ৭০০ জন পলাতক রয়েছে।
বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকায় কারা অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের এসব তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ মোতাহের হোসেন।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, আপনারা জানেন, গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন কারাগার থেকে ২২০০ কারাবন্দী বিভিন্ন কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। এই মুহূর্তে পুনরায় গ্রেফতার হয়েছে ১৫০০ এর মতো। সাত শতাধিক বন্দী যারা এখনো পলাতক রয়েছে। আমাদের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ১১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছে ও জঙ্গি ১৭৪ জন। জঙ্গিসহ বিভিন্ন অপরাধী যারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ এমন ৭০ জন এখনো পলাতক। যারা জামিন পেয়েছে তাদের আমি জঙ্গি বলছি না, তারা জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার হয়ে সেই মামলায় আমাদের কাছে এসেছিলেন। আদালত তাদের জামিন দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট এর পর বিভিন্ন কারাগারে যে সকল ঘটনা ঘটেছে প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। এখানে আমাদের দুটো বিষয় মনে হয়েছে তার মধ্যে একটি অবকাঠামোগত দুর্বলতা ছিল। ওই সময়টুকুতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে ঘটনাগুলো ঘটেছে। আরেকটা বিষয় উঠে এসেছে আমাদের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ছিল। আমরা সব বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছি। যেগুলো আমাদের আওতাধীন আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যেগুলো আমরা দুর্বলতা পেয়েছি সেগুলো প্রস্তাব আকারে সরকারের কাছে পাঠাবো।
সৈয়দ মুহাম্মদ মোতাহের হোসেন জানান, গত ৫ আগস্ট পর এখন পর্যন্ত চারজন জেল সুপার বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন। এছাড়াও বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অভিযোগ তদন্তের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্প্রতি সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান এর ওপরে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হামলার শিকারের ঘটনায় তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বীকার করেন নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। তবে তার দাবি, কারাগার থেকে যখন কোনো আসামিকে বাহিরে নেওয়া হয় তারপরও দায়িত্বে থাকে পুলিশ।
তিনি বলেন, বিশেষ প্রকৃতির বন্দীদের নির্ধারিত এলাকায় মোবাইল ফোন জ্যামার এবং সিসি ক্যামেরা থাকায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। বিধি মোতাবেক শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দী খাট চেয়ার টেবিল পত্রিকার পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে বিলাসী জীবন যাপন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে কোনো বন্দীকে কারাগারের বাহিরে পাঠানোর সময় প্রধান ফটক পর্যন্তই কারা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ব থাকে। এরপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিধি মোতাবেক নিরাপত্তাসহ হাতকড়া বা ডান্ডা বেড়ি পরানো, প্রিজন ভ্যান ও মাইক্রোবাসে নেয়া ইত্যাদি পরিচালিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তরের আওতা বহির্ভূত এলাকায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য কারা অধিদপ্তরকে দায়ী করা যথার্থ হবে না বলেই আমরা মনে করি।
তিনি আরও বলেন, যখন কারা হাসপাতাল বাস্তবায়িত হবে তখন সরকারি হাসপাতালগুলোতে কারাবন্দীদের পাঠানোর আর কোনো প্রয়োজন হবে না।