সংবিধানে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসহ ১৪১(ক) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে কিছু বিষয় যুক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দিনব্যাপী সংস্কার বিষয়ক ও জুলাই সনদ প্রণয়নের জন্য সংলাপের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় প্রথমত জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) এ সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বিষয়গুলো হল— অনুচ্ছেদ ১৪১(ক) সংশোধনের সময় ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদন যুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলীয় উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া, জরুরি অবস্থা চলাকালীন অনুচ্ছেদ ৪৭(ক) এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার (রাইট টু লাইফ) এবং বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বিদ্যমান সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ খর্ব করা যাবে না।

উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাইয়ের আলোচনায় সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সবকটি রাজনৈতিক দল এবং জোট একমত হয়েছিল।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো আজ প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এ সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাবে ঐকমত্য পোষণ করেছে। এক্ষেত্রে, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দান করবেন।

তিনি আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ পূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে তবে তারা সংবিধানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুইজন বিচারপতির মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি যে কোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করবেন- এমন বিধান সংযোজন করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের অভিযোগের কারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ এর অধীন কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তপ্রক্রিয়া চলমান থাকলে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version