আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলমান আইনি কার্যক্রমে অর্থায়নে সহায়তা এবং কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দিতে ওআইসির দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তুরস্কে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক সেশনে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি। রোববার (২২ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, অপর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাও ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। ২০২৪ সালের জন্য জাতিসংঘের প্রাক্কলিত প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৬৮ শতাংশ গত বছর পাওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, তহবিল সংকটের কারণে গত ৩ জুন থেকে ইউনিসেফ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া ডব্লিউএফপি খাদ্য রেশন কমিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে তহবিল না পাওয়া গেলে তা আরও কমবে।

গাম্বিয়া কর্তৃক আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ওআইসি সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ সংহতি, সমর্থন ও সহযোগিতা গাম্বিয়ার প্রয়োজন হবে।

আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আস্থা বাড়বে বলে জানান তৌহিদ হোসেন।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অসাধারণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।

তৌহিদ হোসেন বলেন, রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আরও ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ক্রমবর্ধমান মানবিক, উন্নয়নমূলক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ তার সামর্থ্যের চেয়েও বেশি ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা এখন ওআইসি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে আছি, যেন তারা তাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালন করে।

বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের প্রতি মুসলিম উম্মাহর সংহতি একটি নৈতিক ও ঐতিহাসিক অপরিহার্যতা উল্লেখ করেন তৌহিদ হোসেন।

সম্মেলনের সাইডলাইনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আব্দেল্লাত্তি, আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেইহুন বাইরামভ, আলজেরিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আহমেদ আতাফ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী খালিফা বিন শাহিন আল মারার স‌ঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version