তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিজয় দিবসের পোস্টারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবমাননা ও বিজয় দিবসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। 

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, “১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চিরকাঙ্ক্ষিত মহান বিজয় অর্জন করে। বাঙালির সম্মিলিত বিজয়কে খাটো করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এই সরকার গত জুলাইয়ের রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী আবু সাঈদের ছবি পোস্টারের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি নিচে দেয়া হয়েছে। এটা অনুর্বর মস্তিষ্কের স্থূল প্রয়াস বলে আমরা মনে করি। যেটা একইসাথে অপ্রাসঙ্গিক, অগ্রহণযোগ্য ও অমার্জিত। ২৪ এর তথাকথিত আন্দোলনকে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে সেতু বন্ধন তৈরি করতে চাওয়াটা বালখিল্যতার পরিচায়ক ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবস্থান এবং সেটার ফল হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও তার অগ্রযাত্রা স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণিত। তাই মহান বিজয় দিবসের পোস্টারে এ ধরনের সংযোজনকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সুস্পষ্ট ভাবে সময়ের বিরুদ্ধে সময়কে দাঁড় করানো ও একটি রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা দিয়ে সমগ্র জাতির ইতিহাসে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস হিসেবে দেখছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে আমরা এই ধরনের বাংলাদেশ বিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

এছাড়াও বিজয় দিবসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসররা পরিকল্পিত ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে দেশে এখন আইনের শাসন, সংবিধান, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে অবৈধভাবে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে প্রতিনিয়ত জনগণের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালানো হচ্ছে যা কখনোই এদেশের জনগণ মেনে নিবে না। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি, বিজয় দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানমণ্ডি বত্রিশ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাঁদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে এদেশের জন্ম হয়েছে এখন তাঁদেরকে হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হতে হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, লাখো শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকাকে আবার খামচে ধরেছে একাত্তরের পরাজিত শকুনরা। এরা পাকিস্তানি ভাবধারায় বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিজয়ের মাসে পরিকল্পিত ভাবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পোস্টারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবমাননা করার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিজয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। 

সারাদেশে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিজয়ের মাসে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় খুব শীঘ্রই বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সাথে নিয়ে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version