অনলাইন ডেস্ক
আধুনিক যুগের প্রাণকেন্দ্র কম্পিউটারের পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৪২ সালে। তারপর থেকে প্রতিনিয়ত এর উন্নত সংস্করণ মানবজীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। কিন্তু কম্পিউটারের আরও উন্নত সংস্করণের ভিড়ে ফিকে হয়ে পড়েছে পুরাতন কম্পিউটারগুলো। চলতি বছরের অক্টোবরেই অচল হয়ে যাবে প্রায় ২৪ কোটি কম্পিউটার।
চলতি বছরের ১৪ অক্টোবরের পর উইন্ডোজ ১০ এর অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আর কোনো সফটওয়্যার হালনাগাদ, নিরাপত্তা সংশোধনী বা কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে না মাইক্রোসফট। ফলে পুরনো কম্পিউটারের ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বেন। এর পাশাপাশি উইন্ডোজ ১১ এ আপগ্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত হার্ডওয়্যার না থাকার কারণে অনেক কম্পিউটার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
উইন্ডোজ ১১ এর জন্য প্রয়োজন বেশ উন্নত হার্ডওয়্যার। যেমন- ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম মডিউল, ২.০ চিপ, ১ গিগাহার্জ ডুয়েল কোর প্রসেসর, ৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি স্টোরেজ। এ ধরনের হার্ডওয়্যার প্রায় সব পুরনো মডেলের কম্পিউটারগুলোর মধ্যেই নেই। বিশেষ করে ২০১৬ সালের আগের পিসিগুলোর মধ্যে টিপিএম ২.০ চিপের অভাব রয়েছে, যা উইন্ডোজ ১১ ইনস্টলেশনের জন্য অপরিহার্য।
বিশ্বের প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কম্পিউটার উইন্ডোজ ১০ চালাচ্ছে, কিন্তু ১৪ অক্টোবরের পর এগুলো আর সফটওয়্যার আপডেট পাবে না। ফলে এই পিসিগুলো সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ক্যানালিস রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি এসব কম্পিউটার ফেলে দেওয়া হয় তাহলে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য সৃষ্টি হবে, যা পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
অন্যদিকে মাইক্রোসফট ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত উইন্ডোজ ১০ এর জন্য বর্ধিত সুরক্ষা আপডেট সুবিধা দেবে। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে, যা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছুটা সুবিধাজনক হলেও ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে। যা অনেক ব্যবহারকারীকে নতুন কম্পিউটার কেনার দিকে আগ্রহী করে তুলতে পারে।
তবে সব কম্পিউটারই ভাগাড়ে চলে যাবে এমন নয়। অনেক ব্যবহারকারী লিনাক্স মিন্ট বা উবুন্টুর মত অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন, যা পুরনো কম্পিউটারে ভালোভাবে কাজ করে। অন্যদিকে কম্পিউটারগুলোর পুনর্ব্যবহারও একটি বিকল্প। কিন্তু বিশ্বজুড়ে মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ইলেকট্রনিক বর্জ্য সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে মাইক্রোসফট সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি উইন্ডোজ ১০ এর সমর্থন আরও কিছুদিন বাড়ানো হতো বা উইন্ডোজ ১১ এর হার্ডওয়্যার প্রয়োজনীয়তা কমানো হতো, তবে পরিবেশের উপর চাপ অনেকটা কমতো।
তবে মাইক্রোসফটের ব্যবসায়িক কৌশল এবং পিসি নির্মাতাদের সুবিধার কারণে পরিবেশের জন্য এই সিদ্ধান্তটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরের পর প্রায় ২৪০ মিলিয়ন উইন্ডোজ ১০ চালানো পিসি আর কাজে আসবে না যার পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য, যা বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক বর্জ্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।