ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত জরিমানা আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে দেওয়া বক্তৃতায় বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কথা তুলে ধরে ‘স্বদেশি’ পণ্য ব্যবহারে দেশটির নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিজ নির্বাচনী এলাকা বারাণসীতে এক সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় মোদি বলেন, ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং প্রত্যেক নাগরিকের ‘দেশী’ পণ্য কেনার অঙ্গীকার করা উচিত।

ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্ব অর্থনীতি নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তার পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিটি দেশই নিজের স্বার্থের কথা ভাবছে। ভারতও শিগগিরই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলেছে। তাই আমাদের নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের কৃষক, আমাদের শিল্প, আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থান—এসবই আমাদের কাছে অগ্রাধিকারের বিষয়। সরকার এই লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। এটা শুধু মোদি নয়, সবাইকে বলতে হবে। যারা ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বানাতে চান—যে রাজনৈতিক দলই হোক, যে নেতা-ই হোন; তাদের উচিত দেশের স্বার্থে কথা বলা এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যেন তারা ‘দেশী’ পণ্য কেনার সংকল্প করেন।যখনই আমরা কিছু কিনব, তখন মাপকাঠি হবে একটাই : এমন কিছু কিনব, যা একজন ভারতীয়র ঘাম ঝরিয়ে তৈরি করা হয়েছে। ভারতের মানুষের দক্ষতা ও শ্রমে যা তৈরি হয়েছে, সেটাই আমাদের কাছে ‘দেশী’। আমাদের ‘ভোকাল ফর লোকাল’ মন্ত্র গ্রহণ করতে হবে।

‘মেইক ইন ইন্ডিয়া’ পণ্যের প্রসারের আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিক নতুন কেনাকাটায় স্বদেশি পণ্য কেনার সংকল্প করবেন।

তিনি বলেন, আজ আমি বিশেষ করে ব্যবসায়ী সমাজ, দোকানদারদের অনুরোধ জানাতে চাই—বিশ্ব যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে, তখন আমাদেরও শুধু দেশীয় পণ্য বিক্রি করার সংকল্প নেওয়া উচিত। এই সংকল্পই হবে দেশের প্রতি প্রকৃত সেবা। প্রতিটি কাজে ‘স্বদেশি’ ভাবনা ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণ করবে। এটাই হবে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি। কেবল সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।

এর আগে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানিপণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি ভারত ও রাশিয়াকে ‘মৃত অর্থনীতি’র দুই দেশ বলে কটাক্ষ করেন। নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার বলেছে, এই পদক্ষেপের প্রভাব পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে; যাতে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।

বৃহস্পতিবার দেশটির সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ভারত-আমেরিকার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রভাব সরকার বিশ্লেষণ করছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় সব অংশীজন, রপ্তানিকারক ও শিল্প সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে। সরকার কৃষক, শ্রমিক, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ সব শিল্পক্ষেত্রের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় এবং অগ্রগতিতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version