পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আমরা যদি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, তাহলে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক না কেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের প্রতি সব রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রে বিএনপি তাদের জায়গা থেকে আরও বেশি দায়িত্ব পালন করবে। কারণ তারা বড় দল, তাদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ইকো পার্কে মাশরুম ও মুক্তা চাষ প্রকল্পের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হুসাইনসহ বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতা দুদুর এক বক্তব্যের জবাবে সারজিস আলম বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য, তার দলের বা বিএনপির বক্তব্য নয়। তারা রাজনীতিতে আমাদের সিনিয়র, তাদের দেখে আমরা শিখব, সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কিন্তু তারা যদি বয়সের দিক থেকে যারা অনুজ, তাদের সামনে রেখে প্রতিহিংসামূলক বা ছোট করে কথা বলার যে কালচার, সেটা যদি আবার তৈরি হয়, যেটা আমরা দেখতাম শেখ হাসিনা ড. ইউনূসকে নিয়ে, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছোট করে কথা বলতেন। এটা রাজনৈতিক সৌহার্দ্য নষ্ট করে ফেলেছিল। আমরা একই কালচার তাদের কাছে দেখতে চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য তাদের কাছে যদি কোনো পরামর্শ থাকে, এই পরামর্শ দেওয়ার একটা সুন্দর সম্পর্কের মধ্য থেকে দেওয়া উচিত। আমরা সেটাই প্রত্যাশা করব। ছাত্র আন্দোলনের কারণে শিক্ষার একটি সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এটি আসলে ঠিক না। পরিবেশ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। আমরা শেষ হয়ে গিয়েছি, নষ্ট হয়ে গিয়েছি, এই কথাটা আমরা বলতে পারি না। ছাত্র-জনতার এত বড় ত্যাগ, এত বড় একটি অভ্যুত্থান। আর এই মানুষগুলো এখন এভাবে মিডিয়ার সামনে বুক ফুলিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলছেন। কিছুটা হলেও পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু এত বড় ত্যাগ- এই ত্যাগ শুধু তাদের ত্যাগ নয়, পুরো বাংলাদেশের।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে এনসিপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুটি পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ। কখনো এই দুটি দেশের সম্পর্ক এমন হয়ে যাবে না, যে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। ভারতের কাজ, ভারত কীভাবে বাংলাদেশকে ডিল করছে, কোন চোখে দেখছে, এই জিনিসগুলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। কোনো কিছুই কখনো থেমে থাকে না। আমাদের কেউ যদি অনৈতিক বা অযৌক্তিকভাবে কোনো একটি সুবিধাবঞ্চিত করে, দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার অপশন খুঁজে নেবে। সব কিছুরই কোনো না কোনো বিকল্প অপশন রয়েছে। এমন করে বড় বড় পরাশক্তি অনেককেই চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। দিনশেষে ওই ছোট-ছোট শক্তিগুলো আরও অসংখ্য বিকল্প পথের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি শুধু ভারত নয়, এক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোনো দেশ যদি বিভিন্ন বাণিজ্যিক চুক্তি বা সুযোগ-সুবিধার জায়গায় আমাদের চেপে ধরার চেষ্টা করে, গোটা বিশ্ব আমাদের জন্য খালি রয়েছে। আমরা বিশ্বের অন্য জায়গায়, যেখানে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে, সে সম্পর্ক রেখে আমরা আমাদের সুন্দর একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক করতে পারব। আমরা বিশ্বাস করি, ভারত রাজনৈতিক দল হিসেবে নয় বরং একটি দেশ হিসেবে ফাংশন করবে এবং দেশ হিসেবে আরেক দেশের সঙ্গে তার বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো করবে।