পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে বলে যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, সেটিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা’ বলে অস্বীকার করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এই গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
নাকভি লিখেছেন, ‘‘এই ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার পেছনে আছে কারা আছেন, তা আমরা ভালো করেই জানি। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান অসিম মুনিরকে লক্ষ্য করে এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি—প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে এমন কোনও আলোচনা হয়নি, এমনকি এ ধরনের কোনো চিন্তাও নেই। সেনাপ্রধানও প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেননি।’’
দেশটির এই মন্ত্রী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের দৃঢ় ও সম্মানজনক সম্পর্ক রয়েছে।’’ তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জারদারি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘‘আমি জানি কারা এই মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন, কেন ছড়াচ্ছেন এবং কে এই প্রচারণা থেকে লাভবান হচ্ছেন।’’
নাকভি বলেন, সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের একমাত্র লক্ষ্য পাকিস্তানের শক্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেন, ‘‘যারা এই মিথ্যা প্রচারণার সঙ্গে জড়িত, তারা চাইলে বিদেশি শত্রু গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে যা খুশি তাই করতে পারেন। আর আমরা, ইনশাআল্লাহ, পাকিস্তানকে আবারও শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু দরকার, তাই করব।’’
এদিকে, দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের ‘জিও পাকিস্তান’ অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সিনেটর ইরফানুল্লাহ সিদ্দিকীও জারদারির পদত্যাগের খবর অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘‘জারদারি পদত্যাগ করছেন, ইমরানের ছেলেরা আসছেন, নওয়াজ শরিফ আদিয়ালায় যাচ্ছেন—এসব কোনও সংবাদ নয়, এগুলো বানোয়াট গল্প।’’
সিদ্দিকী বলেন, ‘‘জারদারি সরকারকে কোনও সমস্যায় ফেলেননি এবং একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিজের সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত আছেন তিনি। পিএমএল-এনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই এবং তাকে পদচ্যুত করার জন্য গ্রহণযোগ্য কোনও কারণও নেই।
‘‘আমরা তো পিপিপির সঙ্গে জোটে আছি। তাহলে কেন আমরা এই ব্যবস্থা ভেঙে ফেলব?’’ প্রশ্ন করেন তিনি।
গত কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা বেড়েছে। যা দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর মধ্যে গভীর টানাপড়েনের প্রতিফলন বলে অনেকে মনে করেন। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের আওতায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
চলতি বছরের মে মাসে প্রেসিডেন্ট জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ যৌথভাবে সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসিম মুনিরকে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদবিতে ভূষিত করেন। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ‘‘দূরদর্শী নেতৃত্ব ও ব্যতিক্রমধর্মী কৌশলগত চিন্তার’’ জন্য তাকে এই উপাধি দেওয়া হয়।