দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে দলীয়করণের বাইরে গিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

সোমবার (২৮ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গত অর্ধশতকে বাংলাদেশে যেই দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের মতো করে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় লোক নিয়োগ দিয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণে আক্রান্ত হয়েছে এবং জনবান্ধবতা হারিয়েছে।

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিয়োগ বিষয়ে আখতার বলেন, আমরা এমন একটি সিলেকশন কমিটির কথা বলেছি যা দলনিরপেক্ষ হবে এবং যেখানে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবেই নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব রোধ করে সুশাসনের পথ তৈরি করা সম্ভব হবে।

আখতার হোসেন উল্লেখ করেন, বর্তমানে সংবিধানের ১৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নিয়োগ দেন। এ অবস্থান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটির প্রস্তাব সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা বড় পরিবর্তন নয়, বরং কার্যকর জবাবদিহিতার সূচনা হবে।

তিনি বলেন, গত বছর কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময়ই প্রশ্নফাঁসসহ পিএসসির দুর্বলতা সামনে আসে। সব আমলেই ভাইভা বোর্ডে দলীয় বিবেচনায় প্রার্থী বাছাই হয়েছে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়।

আখতার হোসেন বলেন, দুদক এখন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান নিয়োগ দেন সরকার প্রধান। ফলে অনেক সময় এটি ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি আড়াল করে, আর বিরোধীদের টার্গেট করে। আমরা চাই, এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হোক, যার প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগ হবে একটি নিরপেক্ষ সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে।

তিনি বলেন, আইন সহজে বদলানো যায়, সংবিধান নয়। তাই এসব কমিটির কাঠামো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকলে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেই আসুক না কেন, সিস্টেম বদলে দেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হবে।

আখতার হোসেন বলেন, পিএসসি ও দুদকের নিয়োগ কমিটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মতো এখানেও বিএনপি তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করুক। নির্বাচনী সংস্কারে বিএনপি সিলেকশন কমিটিতে সম্মত হয়েছে, তাহলে অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন নয়?

তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছে। তারা আর দলীয়করণের শিকার প্রশাসন দেখতে চায় না। আমরা চাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করুক, জনগণের স্বার্থে কাজ করুক, কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার না হোক।

সংলাপের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে আখতার হোসেন বলেন, আমরা রাষ্ট্রকে এমন এক কাঠামোয় নিয়ে যেতে চাই যেখানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ থাকবে, জবাবদিহিতা থাকবে এবং চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের ভিত্তিতে প্রশাসন পরিচালিত হবে। সেই লক্ষ্যে এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version