বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি, রূপসী বাংলার কবি এবং নির্জনতম কবি হিসেবে পরিচিত জীবনানন্দ দাশের প্রয়াণ দিবস আজ (২২ অক্টোবর)। ১৯৫৪ সালের এই দিনে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি।

কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বরিশাল (তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন শিক্ষক এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি।

মায়ের কাছেই তিনি সাহিত্যচর্চার প্রাথমিক অনুপ্রেরণা লাভ করেন।

জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় গ্রামবাংলার চিরায়ত রূপ, প্রকৃতি এবং মানুষের অন্তর্গত বিষাদ ও একাকীত্বকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তার সৃষ্ট কবিতায় পরাবাস্তবতা ও গভীর দার্শনিক চেতনার প্রকাশ দেখা যায়। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির।

তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় রূপসী বাংলা ও বেলা অবেলা কালবেলা।

১৯৫৪ সালের ১৪ই অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন কবি জীবনানন্দ দাশ। দুর্ঘটনার পর তাঁকে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ আট দিন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ২২শে অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ট্রাম দুর্ঘটনায় কবির মৃত্যু ছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা। কারো কারো মতে, এই দুর্ঘটনা ছিল কবির স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রয়াস। প্রতি বছর এই দিনটিতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ বিশ্বের বাংলাভাষী সাহিত্যপ্রেমীরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কবিকে স্মরণ করেন। কবির জন্মস্থান বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মের গভীরতা ও স্বতন্ত্র শৈলী তাকে বাংলা সাহিত্যে এক অমর আসনে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

তার কবিতা আজও পাঠকের মনে বাংলার নিসর্গ, ভালোবাসা ও মানুষের অস্তিত্বের অর্থ অনুসন্ধানের প্রেরণা যোগায়। তার প্রয়াণ ছিল বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version