সোমবার, জুলাই ২৮

সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ‘সাম‍্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করা নিয়ে বামপন্থি চারটি রাজনৈতিক দল আপত্তি তুলেছে। দলগুলো হলো- সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ। তবে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলো কমিশনের প্রস্তাবে রাজি।

রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরেন। এ নিয়ে কমিশনের বৈঠকে কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়।

কমিশনের মধ‍্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ আছে। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই সংবিধানে অনেক অসম্পূর্ণতা আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি, যাতে ঘাটতিগুলো পূরণ করা যায়। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে ছাড় দেওয়া সম্ভব না।

বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি প্রসঙ্গে এভাবে লেখা যেতে পারে। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার চার মূলনীতির সঙ্গে (৭২ সংবিধান অনুযায়ী- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা) সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।

কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতির প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। বরং এটাই আমাদের প্রস্তাব।

গণসংহিতর নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলো—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা—সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।

বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমরা গত চারদিন ধরে আলোচনা করছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নেই আসে না। কারণ সমাজতন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটা পরিত্যক্ত বিষয় হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বিগত চারদিনের আলোচনার পর কমিশন আজকে যে প্রস্তাব দিয়েছে- সাম্য, মানবিক মর্যদা… তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েছি। যদিও আমাদের অনেকের মনের মধ্যে ভিন্নমত আছে, সেটা হলো- আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থাও বিশ্বাস এই শব্দটা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর কমিশনের প্রস্তাবে যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি কথা আছে, তাই আমরা ভিন্নমত থেকে সরে এসেছি। তবে, ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং সেটা পাস হয়, হয়তো তখন আমরা তার বিরোধিতা করবে না।

একই প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে পূর্বের (মূলনীতি) সবকিছু বাতিল করা। কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা আছি। আমরা পূর্বেকার তর্কে যেতে চাই না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version