বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন,  নির্বাচনে যারা ভয় পায়, যারা বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় এবং নির্বাচন পিছিয়ে তারা মনে করে কিছু শক্তি সঞ্চয় করে নির্বাচন করবে… প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে চায়। তাদের প্রতি আমার একটা উপদেশ, আপনারা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থাকেন না কেন?  

আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাসদ আয়োজিত ‘অপূর্ণ জাতীয় আকঙ্ক্ষা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা আগামী দিনে থাকেন, যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের ওপর প্রেশার গ্রুপের কাজ করবেন। এটা ভালো জিনিস। এটা থাকা দরকার। সিভিল সোসাইটি দরকার, প্রেশার গ্রুপ দরকার। আপনি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থেকে যান। নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে কেন আপনি ধ্বংস করতে চাচ্ছেন?

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এক জায়গায়, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা নিয়ে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেন। কোনো কমিশন আপনার এই সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তি ঢাকায় বসে বাংলাদেশের মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষকে তার সমস্যা সমাধান করতে হবে একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একটা কমিশন হয়েছে সেখানে সবাই যাচ্ছে এবং মতামত দিচ্ছে… যতটুকু ঐকমত্য সম্ভব অতটুকু আপনি করতে পারবেন। আমরা তো সব বাকশাল করতে বসিনি যে, সব এক জায়গায় ঐকমত্য হবে তারপরে নির্বাচন হবে, তারপরে আপনার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। তারপর জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। এটা তো সম্ভব না।

তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেরকম গণতন্ত্রয়নের কথা আসছে, অর্থনীতিতেও গণতন্ত্রয়ণ করতে হবে। রাজনীতিকে খালি গণতন্ত্রয়ণ করলে এটা টেকসই হবে না। আপনাকে অর্থনীতিকে গণতন্ত্রয়ণ করতে হবে। সামাজিক ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রয়ণ করতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানে চরম দক্ষিণপন্থীর উত্থান হয়েছে। ধর্মীয় ভাবাদর্শের জড়াজড়ি হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাম প্রগতিশীলদের যে দায়িত্ব ছিল, সেটা ঠিক মতো পালন করা যায়নি।

তিনি বলেন, এতগুলো কমিশন হয়েছে, কিন্ত বৈষম্যবিরোধী কোনো কমিশন গঠন হয়নি। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আগামী ৩/৪ মাসে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক করে  নির্বাচন করা সম্ভব। নির্বাচন যদি অনিশ্চিত থাকে, নির্বাচন যদি দোলাচলে থাকে তাহলে কিন্তু নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে।

গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা অনেক আশা নিয়ে ছিলাম। কিন্তু প্রতিদিনই আমরা আশাহত হচ্ছি। জাতি জানতে চাচ্ছে কবে কখন নির্বাচন হবে। কিন্তু সরকার আমাদের সাথে কানামাছি খেলছে। এরমধ্যে আবার একটা কিংস পার্টি করে দিয়েছে। জাতির সাথে তামাশা শুরু করেছে সরকার। এই তামাশা বন্ধ করেন। কেউ কেউ এখন বলছে স্থানীয় নির্বাচন করেন। কারা এসব বলে আমরা বুঝি না? পুরো জিনিসে হযবরল অবস্থা। আমরা এটা চাই না। আমরা চারিদিকে অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, লন্ডনের বৈঠকের পরে স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু নব্য রাজনৈতিক দল নতুন করে যে ষড়যন্ত্র করছে তা হতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ মৌলবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, অভ্যুত্থান যারা করেছে, যে যুব সমাজ, তারা এখন বিভিন্নভাবে খণ্ডিত হয়ে গিয়েছে। একটা অংশ একটা পার্টি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে। তাদের আরেকটা অংশ যারা, তারাই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করেছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version