ফিলিস্তিনের ৩টি মানবাধিকার সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্তে সহযোগিতা করায় ওই তিনটি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি।

ইসরায়েল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে বিচারের ওপর নগ্ন আঘাত বলে নিন্দা জানিয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার জানান, আল হক, আল মেজান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস এবং প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (পিসিএইচআর)-কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশের আওতায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর ওই আদেশ জারি হয়।

রুবিও বলেন, “আইসিসি ইসরায়েলি নাগরিকদের তদন্ত, গ্রেপ্তার, আটক বা বিচারের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, এই সংস্থাগুলো সরাসরি তাতে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল রোম সংবিধির অংশীদার নয়, তাই আমরা আইসিসির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রম ও অতি-ক্ষমতার বিরোধিতা করি।”

নিষেধাজ্ঞার কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ভিসা বাতিল করে দেয়, যাতে তারা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিউইয়র্ক যেতে না পারেন।

এদিকে ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও বেলজিয়ামের মতো দেশগুলো ওই অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রুবিও বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে “বড় সমস্যা” তৈরি হবে, বিশেষত ইসরায়েল যখন পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।

ইসরায়েল অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’আর বলেন, “তিনটি ফিলিস্তিনি সংগঠনকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আমরা রুবিওর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আইসিসিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অভিযানে সহায়তা করেছে।”

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি দাননও নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এই সংগঠনগুলো কেবল আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধেও কাজ করেছে।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। অ্যামনেস্টির গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি পরিচালক এরিকা গুয়েভারা-রোসাস একে “গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও মানবাধিকার ও বৈশ্বিক বিচারের ওপর লজ্জাজনক আঘাত” আখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই সংগঠনগুলো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য নথিবদ্ধ করে আসছে। এটি পুরো ফিলিস্তিনি মানবাধিকার আন্দোলনের ওপর নগ্ন আঘাত এবং বৈশ্বিক মানবাধিকার সম্প্রদায়কে দুর্বল করার প্রচেষ্টা। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের সম্ভাবনাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version