পোশাক শিল্পে টেকসই সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে লজিস্টিক উন্নয়ন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও কাস্টমস-বিষয়ক জটিলতাগুলো নিরসনের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বায়ার্স ফোরাম।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি জানানো হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্পে টেকসই সাপ্লাই চেইন জোরদার করার লক্ষ্যে বায়ার্স ফোরামের প্রতিনিধি এবং বিজিএমইএ নেতারা রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ বৈঠক করেন। এতে ৪০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকটির মূল লক্ষ্য ছিল পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অংশীদারিত্বমূলক কৌশল এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া। এ সময় টেকসই সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পোশাক ব্র্যান্ডগুলো এবং বিজিএমইএ কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে পারে সে বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়।
আলোচনার মধ্যে ছিল পোশাক শিল্পের জন্য বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ, সমন্বিত আচরণবিধি প্রবর্তন, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, শ্রম সংস্কার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি, জিএসপি প্লাস থ্রেশহোল্ডের চ্যালেঞ্জসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়।
বৈঠকে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে টেকসই ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রম পরিবেশ তৈরি এবং পরিবেশগত টেকসই অবস্থার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিজিএমইএয়ের অন্যতম বিষয় ছিল পোশাক শিল্পের জন্য একটি সমন্বিত আচরণবিধি প্রণয়নে পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা ও সমর্থন পাওয়া, যা কিনা সাপ্লাই চেইনে সব অংশীদারকে উপকৃত করবে।
এ সময় বিজিএমইএ পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে দেখান যে সমন্বিত আচরণবিধি কীভাবে নিরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজতর করে এবং কারখানার ওপর চাপ কমিয়ে শিল্পকে আরও নৈতিক, টেকসই ও দায়িত্বশীল করে তুলতে পারে।
আলোচনায় শ্রম সংস্কার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান সভায় বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারের সাম্প্রতিক অগ্রগ্রতি তুলে ধরে বলেন, এ সংস্কারগুলো শুধু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণের জন্যই নয়, বরং টেকসই ও নিরাপদ শিল্প পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য করা হচ্ছে। তিনি ব্র্যান্ডগুলোকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের এই ইতিবাচক পরিবর্তনে অংশীদার হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক সংগ্রহ বৃদ্ধি করা এবং আরও উদ্ভাবনী উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে সরবরাহকারীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে পোশাক শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং নৈতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য বেটার প্রাইসিং মডেল, ইফিশিয়েন্সি মডেল প্রণয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পাশে এগিয়ে আসার জন্য পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি আহ্বান রাখেন।
অপরদিকে বায়ার্স ফোরামের প্রতিনিধিরা বলেছেন, শিল্পে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে। তারা বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউএফটি) টেকনিক্যাল ডিজাইন সেকশন খোলা এবং কারখানা পর্যায়ে তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারদের নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। তারা জানান, এটি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছে ব্র্যান্ডগুলোর অন্যতম প্রত্যাশা। পাশাপাশি তারা এ দেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে তাদের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে আশ্বাস দেন।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে সংস্থাটির পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, সহ-সভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, সহ-সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান ও মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ফয়সাল সামাদ, মো. হাসিব উদ্দিন, মোহাম্মদ আবদুস সালাম, নাফিস-উদ-দৌলা, সুমাইয়া ইসলাম, মজুমদার আরিফুর রহমান, শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ, কাজী মিজানুর রহমান, রশিদ আহমেদ হোসাইনী, রুমানা রশীদ, মোহাম্মদ সোহেল ও সামিহা আজিম এবং বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন বিজিএমইএ ব্র্যান্ডিংয়ের চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম (শুভ), বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন বায়ার্স ফোরামের চেয়ারম্যান মাশেদ রহমান আব্দুল্লাহ ও বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ওয়ান স্টপ সেলের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া।